শিশুদের দৈনন্দিন জীবনে একটি নির্দিষ্ট রুটিন থাকা খুবই জরুরি। এটি তাদের মধ্যে শৃঙ্খলাবোধ তৈরি করে, নিরাপত্তা দেয় এবং দিনের বিভিন্ন কাজের জন্য প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। তবে ছোট শিশুদের জন্য গতানুগতিক রুটিন অনেক সময় একঘেয়ে লাগতে পারে। তাই খেলার মাধ্যমে রুটিন তৈরি করা একটি চমৎকার উপায়, যা শিশুদের আনন্দ দেবে এবং একইসাথে তাদের দৈনন্দিন কাজগুলোও সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন করতে সাহায্য করবে।
এখানে বাড়িতে চেষ্টা করার মতো কিছু খেলার-ভিত্তিক রুটিন আইডিয়া দেওয়া হলো:
১. ঘুম থেকে ওঠার খেলা: সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর শিশুকে বিছানায় বসিয়ে হালকা স্ট্রেচিং বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নাড়ানোর খেলা করতে উৎসাহিত করুন। আপনি বলতে পারেন “চলো আমরা লম্বা হই!” এবং শিশুকে হাত উপরে তুলতে বলুন, অথবা “পা ছুঁয়ে দেখি!” বলে সামনের দিকে ঝুঁকতে বলুন। এরপরে, দাঁত ব্রাশ করা বা মুখ ধোয়ার সময় পছন্দের ছড়া গান গাইতে পারেন।
২. সকালের নাস্তার প্রস্তুতিতে খেলা: শিশুদের বয়স অনুযায়ী, তাদের নাস্তা তৈরিতে ছোট ছোট কাজে অংশ নিতে উৎসাহিত করুন। যেমন – ডিম ফেটানো (বড় বাচ্চাদের জন্য), ফল ধোয়া, বা টেবিল গোছানো। এটিকে একটি মজার খেলার মতো করে তুলুন। কে কত দ্রুত এবং সুন্দরভাবে কাজটি করতে পারে, এমন প্রতিযোগিতাও করতে পারেন।
৩. শেখার সময় খেলার ছোঁয়া: পড়াশোনার সময়টিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে খেলার সাহায্য নিন। বর্ণমালা শেখানোর জন্য ফ্ল্যাশ কার্ড ব্যবহার করতে পারেন এবং প্রতিটি অক্ষরের সাথে একটি মজার অঙ্গভঙ্গি বা শব্দ যোগ করতে পারেন। গণিত শেখানোর জন্য ব্লক বা অন্যান্য বস্তু ব্যবহার করে গণনা করা বা যোগ-বিয়োগের ধারণা দিতে পারেন। গল্প বলার সময় বিভিন্ন চরিত্রের জন্য আলাদা কণ্ঠ ব্যবহার করুন, যা শিশুদের মনোযোগ ধরে রাখবে।
৪. সৃজনশীল খেলার সময়: দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় সৃজনশীল খেলার জন্য রাখুন। এখানে শিশুরা তাদের কল্পনাশক্তি ব্যবহার করে যেকোনো ধরনের খেলা খেলতে পারে – ছবি আঁকা, গল্প তৈরি করা, ব্লক দিয়ে কিছু বানানো, বা পোশাক পরে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করা। এই সময় তাদের কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম বেঁধে দেবেন না, তাদের নিজেদের মতো করে খেলতে দিন।
৫. শারীরিক কার্যকলাপের খেলা: শিশুদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য দৌড়াদৌড়ি, লাফানো এবং অন্যান্য শারীরিক কার্যকলাপ খুবই জরুরি। দিনের একটি সময় এমন খেলার জন্য রাখুন যেখানে তারা তাদের শরীরের শক্তি ব্যবহার করতে পারে – লুকোচুরি খেলা, বল ছোড়াছুড়ি, অথবা ঘরেই ছোটখাটো obstacle course তৈরি করতে পারেন।
৬. গুছিয়ে রাখার খেলা: খেলার শেষে বা দিনের শেষে খেলনা এবং অন্যান্য জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস। এটিকে একটি মজার খেলার মতো করে তুলুন। “চলো আমরা আমাদের বন্ধুদের (খেলনা) তাদের বাড়িতে (বাক্স) ফেরত পাঠাই!” – এমন কথা বলে শিশুদের খেলনা গুছাতে উৎসাহিত করতে পারেন।
৭. রাতের রুটিনে আরামদায়ক খেলা: ঘুমোতে যাওয়ার আগে শান্ত এবং আরামদায়ক কিছু খেলার সাথে রুটিন শেষ করুন। গল্প শোনা, গান গাওয়া, অথবা হালকা ধাঁধা জিজ্ঞাসা করা যেতে পারে। এটি শিশুদের মনকে শান্ত করবে এবং ভালো ঘুমাতে সাহায্য করবে।
কিছু বাড়তি টিপস:
- শিশুদের আগ্রহ এবং বয়সের সাথে সঙ্গতি রেখে রুটিন তৈরি করুন।
- রুটিন নমনীয় রাখুন এবং প্রয়োজনে পরিবর্তন করুন।
- খেলার সময় উৎসাহ দিন এবং তাদের প্রচেষ্টার প্রশংসা করুন।
- নিজেরাও তাদের সাথে খেলায় অংশ নিন, এটি তাদের আরও বেশি উৎসাহিত করবে।
খেলার-ভিত্তিক রুটিন শুধু শিশুদের জন্যই আনন্দদায়ক নয়, এটি বাবা-মায়ের সাথে তাদের বন্ধনকেও আরও দৃঢ় করে তোলে। তাই আর দেরি না করে আজই আপনার বাড়িতে এই ধরনের কিছু রুটিন তৈরি করার চেষ্টা করুন!