খেলনা শিশুদের আনন্দের উৎস। কিন্তু কখনও কখনও এই খেলনাগুলোই শিশুদের জন্য অ্যালার্জির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। অনেক বাবা-মা হয়তো জানেন না যে, নির্দিষ্ট কিছু খেলনার উপাদান শিশুদের মধ্যে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। এই বিষয়ে সঠিক জ্ঞান থাকলে শিশুদের সুস্থ ও সুরক্ষিত রাখা সম্ভব।
খেলনা থেকে অ্যালার্জির সাধারণ কারণসমূহ:
১. ল্যাটেক্স: কিছু খেলনা, যেমন বেলুন, পুতুল বা অন্যান্য নরম খেলনায় ল্যাটেক্স ব্যবহার করা হয়। ল্যাটেক্স অ্যালার্জির ক্ষেত্রে ত্বকে ফুসকুড়ি, চুলকানি, লালচে ভাব বা শ্বাসকষ্টের মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
২. ধাতু: নিকেল একটি সাধারণ অ্যালার্জেন, যা খেলনার ক্ষুদ্র অংশে বা গহনার মতো খেলনায় থাকতে পারে। নিকেল অ্যালার্জি থেকে ত্বকে প্রদাহ, চুলকানি ও র্যাশ হতে পারে।
৩. প্লাস্টিক ও রাসায়নিক পদার্থ: কিছু প্লাস্টিক খেলনায় ব্যবহৃত বিসফেনল এ (BPA) বা ফ্যাথালেটসের (Phthalates) মতো রাসায়নিক পদার্থ শিশুদের ত্বকে বা শ্বাসতন্ত্রে অ্যালার্জির কারণ হতে পারে। নতুন খেলনা থেকে এক ধরনের তীব্র গন্ধ এলে তা রাসায়নিকের উপস্থিতির ইঙ্গিত হতে পারে।
৪. ধুলো ও মাইট: নরম খেলনা, যেমন স্টাফড অ্যানিমেল বা টেডি বিয়ার, খুব দ্রুত ধুলো এবং ডাস্ট মাইট সংগ্রহ করে। এই ধুলো এবং মাইটগুলো অ্যাজমা বা অ্যালার্জিক রাইনাইটিসের মতো শ্বাসকষ্টজনিত অ্যালার্জির কারণ হতে পারে, যার লক্ষণ হলো হাঁচি, কাশি, নাক দিয়ে পানি পড়া বা চোখ চুলকানো।
৫. রং ও ডাই: খেলনায় ব্যবহৃত কৃত্রিম রং বা ডাই কিছু শিশুর ত্বকে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে সস্তা খেলনাগুলোতে এমন রং ব্যবহার করা হয় যা ত্বকের সংস্পর্শে এসে অ্যালার্জির কারণ হয়।
লক্ষণসমূহ যা দেখলে সতর্ক হবেন:
- ত্বকে লালচে ফুসকুড়ি বা র্যাশ
- তীব্র চুলকানি
- চোখ লাল হওয়া বা চোখ থেকে পানি পড়া
- নাক বন্ধ হওয়া বা সর্দি
- হাঁচি বা কাশি
- শ্বাসকষ্ট বা শ্বাস নেওয়ার সময় হিসহিস শব্দ
- ঠোঁট বা মুখ ফুলে যাওয়া (গুরুতর ক্ষেত্রে)
প্রতিরোধের উপায়:
- উপাদান যাচাই করুন: খেলনা কেনার আগে সেটির উপাদান তালিকা দেখে নিন। ল্যাটেক্স, নিকেল বা ক্ষতিকারক রাসায়নিকবিহীন খেলনা বেছে নিন।
- সফট খেলনা নিয়মিত পরিষ্কার করুন: নরম খেলনাগুলো নিয়মিত গরম পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করুন এবং ভালোভাবে শুকিয়ে নিন। সম্ভব হলে হাইপোঅ্যালার্জেনিক স্টাফড টয় ব্যবহার করুন।
- নতুন খেলনা পরিষ্কার করুন: নতুন খেলনা ব্যবহারের আগে ভেজা কাপড় দিয়ে ভালোভাবে মুছে নিন বা ধুয়ে ফেলুন, বিশেষ করে যদি তাতে রাসায়নিক গন্ধ থাকে।
- ধাতু বা প্লাস্টিক পরীক্ষা করুন: ধাতব বা প্লাস্টিকের খেলনা থেকে কোনো অপ্রীতিকর গন্ধ বা উজ্জ্বল রং উঠে আসছে কিনা তা পরীক্ষা করুন।
- বায়ুমুক্ত রাখুন: খেলনার বাক্স বা স্টোরেজগুলো সিল করা রাখুন যাতে ধুলো প্রবেশ করতে না পারে।
- লক্ষণ শনাক্ত করুন: শিশুর মধ্যে অ্যালার্জির কোনো লক্ষণ দেখা গেলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
শিশুদের সুরক্ষায় খেলনার গুণগত মান এবং উপাদান সম্পর্কে সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরি। আপনার সচেতনতাই আপনার সন্তানের সুস্থ ও আনন্দময় শৈশবের চাবিকাঠি।