আজকাল শিশুদের খেলনার দোকানে গেলে আমরা প্রায়শই উজ্জ্বল রঙের প্লাস্টিকের খেলনা দেখতে পাই। এগুলি দেখতে আকর্ষণীয় হলেও, এদের মধ্যে অনেক সময় ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ থাকতে পারে, যা শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়াও, এই খেলনাগুলো পরিবেশের ওপর দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, কারণ প্লাস্টিক সহজে পচে না এবং বর্জ্য হিসেবে জমা হতে থাকে।
পরিবেশ-বান্ধব খেলনা বেছে নেওয়ার মাধ্যমে আমরা একদিকে যেমন আমাদের সন্তানের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারি, তেমনি অন্যদিকে ভবিষ্যতের জন্য একটি সবুজ পৃথিবী গড়ার কাজেও অংশ নিতে পারি।
কেন পরিবেশ-বান্ধব খেলনা বেছে নেবেন?
১. শিশুদের জন্য নিরাপদ: পরিবেশ-বান্ধব খেলনা সাধারণত প্রাকৃতিক উপাদান, যেমন কাঠ, বাঁশ, অর্গানিক তুলা বা পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপকরণ দিয়ে তৈরি হয়। এগুলোতে BPA, PVC, phthalates-এর মতো ক্ষতিকারক রাসায়নিক থাকে না, এবং সাধারণত জল-ভিত্তিক অ-বিষাক্ত রঙ ব্যবহার করা হয়। তাই শিশুরা মুখে দিলেও তা নিরাপদ থাকে।
২. টেকসই এবং দীর্ঘস্থায়ী: প্লাস্টিকের খেলনা সহজেই ভেঙে যায় বা নষ্ট হয়ে যায়, কিন্তু কাঠ বা বাঁশের মতো প্রাকৃতিক উপাদানের খেলনা অনেক বেশি মজবুত এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়। ফলে একবার কিনলে তা অনেক দিন ব্যবহার করা যায়, এমনকি ছোট ভাইবোনদের জন্যও রেখে দেওয়া যায়।
৩. কল্পনা এবং সৃজনশীলতা বৃদ্ধি: পরিবেশ-বান্ধব খেলনাগুলো প্রায়শই সহজ ডিজাইনের হয়। এগুলোতে ঝলমলে আলো বা যান্ত্রিক শব্দ থাকে না, যা শিশুদের নিজেদের কল্পনা ব্যবহার করে খেলার জন্য উৎসাহিত করে। যেমন কাঠের ব্লক বা পাজল সেট শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশ এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বাড়ায়।
৪. পরিবেশের জন্য ভালো: এই খেলনাগুলো নবায়নযোগ্য উৎস থেকে তৈরি হয় এবং পরিবেশের ওপর কম প্রভাব ফেলে। এছাড়াও, অনেক সময় এগুলো প্লাস্টিক-মুক্ত প্যাকেজিং-এ আসে, যা সামগ্রিক পরিবেশগত প্রভাব কমায়। শিশুদের ছোটবেলা থেকেই টেকসই জীবনযাপনের গুরুত্ব শেখাতে এটি সাহায্য করে।
৫. কম সংবেদনশীল ওভারলোড: প্লাস্টিকের অনেক খেলনা অতিরিক্ত শব্দ এবং আলোর মাধ্যমে শিশুদেরকে উদ্দীপিত করে তোলে, যা তাদের জন্য বিরক্তির কারণ হতে পারে। প্রাকৃতিক খেলনাগুলো শান্ত এবং আরামদায়ক খেলার পরিবেশ তৈরি করে, যা শিশুদের মনোযোগ এবং সৃজনশীলতাকে সহায়তা করে।
কিছু পরিবেশ-বান্ধব খেলনার উদাহরণ:
- কাঠের খেলনা: কাঠের ব্লক, কাঠের গাড়ি, পুতুল, পাজল সেট ইত্যাদি। এগুলি টেকসই, নিরাপদ এবং শিশুদের সৃজনশীলতা বাড়ায়। বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে তৈরি বাঁশের খেলনাও বেশ জনপ্রিয় এবং পরিবেশ-বান্ধব।
- কাপড়ের খেলনা: অর্গানিক তুলা বা পুনর্ব্যবহারযোগ্য কাপড় দিয়ে তৈরি নরম পুতুল, প্রাণীর খেলনা বা কাপড়ের বই। এগুলি শিশুদের জন্য নিরাপদ এবং সহজে ধোয়া যায়।
- ধাতব খেলনা: কিছু ধাতব খেলনা যেমন ছোট গাড়ি বা মেটাল কনস্ট্রাকশন সেট, যা দীর্ঘস্থায়ী এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপাদান দিয়ে তৈরি। তবে এগুলোতে বিষাক্ত রঙ ব্যবহার করা হয়নি তা নিশ্চিত করতে হবে।
- বাঁশের খেলনা: বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী বাঁশের খেলনাগুলো খুবই পরিবেশ-বান্ধব এবং কারুকার্যময়। ছোটদের রান্নার সেট বা খেলনা ঘর বাঁশ দিয়ে তৈরি করা যায়।
- পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপাদান থেকে তৈরি খেলনা: কিছু খেলনা পুরোনো প্লাস্টিক বা অন্যান্য পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপাদান থেকে তৈরি হয়, যা বর্জ্য কমাতে সাহায্য করে।
পরিবেশ-বান্ধব খেলনা নির্বাচন করে আমরা আমাদের শিশুদের জন্য একটি সুস্থ ও নিরাপদ খেলার পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারি, এবং একই সাথে পরিবেশ সংরক্ষণেও অবদান রাখতে পারি।