সন্তান জন্মদানের পর একজন মায়ের জীবন সম্পূর্ণ বদলে যায়। নবজাতকের যত্ন, অনিদ্রা, শারীরিক পরিবর্তন এবং হরমোনের ওঠানামা—সব মিলিয়ে এই সময়টা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। এই সময়ে মায়ের মানসিক এবং শারীরিক সুস্থতা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ‘প্রসবোত্তর মায়ের জন্য খেলনা’ (Postpartum Toys for Moms) বলে কি আদৌ কিছু আছে? বা এটি কি শুধু একটি আধুনিক ধারণা?
প্রথমেই বলে রাখা ভালো, শিশুদের খেলনার মতো সরাসরি “মায়ের খেলনা” বলে কোনো সুনির্দিষ্ট বাজার প্রচলিত নেই। তবে, যে ধারণাটির ওপর ভিত্তি করে এই প্রশ্নটি উঠেছে, সেটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রসবোত্তর সময়ে মায়ের মানসিক চাপ কমানো, স্বস্তি দেওয়া এবং অল্প সময়ের জন্য হলেও মনোযোগ সরিয়ে নেওয়ার জন্য কিছু জিনিসপত্র বা কার্যকলাপের প্রয়োজন হয়, যা এক অর্থে ‘খেলার’ মতোই কাজ করতে পারে। এগুলিকে আমরা প্রচলিত অর্থে খেলনা না বলে বরং ‘স্ব-যত্নের উপকরণ’ (Self-care tools) বা ‘স্ট্রেস রিলিফ আইটেম’ বলতে পারি।
কেন প্রসবোত্তর মায়ের জন্য এমন ‘খেলনা’ প্রয়োজন?
নতুন মায়েরা প্রায়শই নিজেদের জন্য সময় পান না। সারাক্ষণ শিশুর যত্ন, ঘর সামলানো এবং নতুন রুটিনের সাথে মানিয়ে নিতে গিয়ে তারা নিজেদের আবেগিক ও মানসিক চাহিদা পূরণ করতে পারেন না। এই সময়ে কিছু নির্দিষ্ট জিনিস বা ক্রিয়াকলাপ তাদের নিম্নোক্ত উপায়ে সাহায্য করতে পারে:
- স্ট্রেস কমানো: হালকা বিনোদন বা মনোযোগ সরিয়ে নেওয়ার মতো কোনো কিছু উদ্বেগ এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
- মস্তিষ্ককে বিশ্রাম দেওয়া: একটানা শিশুর যত্ন নিতে গিয়ে মায়েদের মস্তিষ্ক ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এমন কিছু যা ফোকাস বদলাতে বা হালকা আনন্দ দিতে পারে, তা মস্তিষ্কের জন্য এক ধরনের বিরতি হিসেবে কাজ করে।
- আবেগের ভারসাম্য: প্রসবোত্তর বিষণ্ণতা বা উদ্বেগের ঝুঁকি কমাতে মনকে সতেজ রাখা জরুরি। ‘খেলার’ মতো হালকা কিছু কার্যকলাপে অংশ নেওয়া এন্ডোরফিন নিঃসরণ করে, যা মেজাজ ভালো রাখে।
- স্ব-যত্নের একটি অংশ: নিজের জন্য সময় বের করা এবং নিজের মনকে ভালো রাখার চেষ্টা করাও স্ব-যত্নের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
কী ধরনের জিনিস এই ‘খেলনার’ ভূমিকা পালন করতে পারে?
যদিও এগুলোকে সরাসরি ‘খেলনা’ বলা যায় না, তবুও নিম্নলিখিত জিনিসগুলি নতুন মায়েদের জন্য স্ট্রেস রিলিফ বা মানসিক স্বস্তির কারণ হতে পারে:
- ফিজেট টয়স (Fidget Toys) বা স্ট্রেস বল: এগুলি হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করলে বা চাপ দিলে মনোযোগ অন্য দিকে চলে যায় এবং চাপ কমে।
- অ্যাডাল্ট কালারিং বুকস (Adult Coloring Books) বা পাজল: এগুলি সৃজনশীলতা এবং ফোকাস বাড়াতে সাহায্য করে। অল্প সময়ের জন্য হলেও অন্য একটি কাজে মন দিলে দৈনন্দিন চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
- সেন্সরি আইটেমস (Sensory Items): সুগন্ধি মোমবাতি, আরামদায়ক বালিশ, বা হাতে ধরে রাখার মতো নরম ও টেক্সচারযুক্ত জিনিসপত্র মনকে শান্ত করতে সাহায্য করে।
- সাধারণ বোর্ড গেমস বা কার্ড গেমস: যখন কোনো পার্টনার বা পরিবারের সদস্যের সাথে অল্প সময়ের জন্য খেলার সুযোগ হয়, তখন এটি মানসিক রিফ্রেশমেন্ট এনে দেয়।
- হালকা ক্র্যাফটিং কিটস: যদি মায়ের ক্র্যাফটিংয়ের শখ থাকে, তাহলে ছোট ছোট কিছু তৈরি করার কিট, যা কম সময়ে সম্পন্ন করা যায়, তা মনকে ব্যস্ত রাখতে পারে।
- নিজের পছন্দের বই বা অডিওবুক: যখন শিশু ঘুমাচ্ছে বা মায়ের হাতে অল্প সময় আছে, তখন নিজের পছন্দের একটি বই পড়া বা অডিওবুক শোনা মনকে শান্তি দিতে পারে।
- ছোট মালিশ যন্ত্র (Handheld Massager): নবজাতককে কোলে রাখা বা বুকের দুধ খাওয়ানোর কারণে পিঠ, ঘাড় বা হাতে ব্যথা হওয়া খুবই স্বাভাবিক। একটি ছোট হ্যান্ডহেল্ড ম্যাসাজার এই ব্যথা উপশমে সাহায্য করতে পারে, যা এক ধরনের স্বস্তি দেয়।
পরিশেষে বলা যায়, প্রসবোত্তর সময়ে মায়ের জন্য “খেলনা” হয়তো প্রচলিত অর্থে কোনো পণ্য নয়, তবে এর পেছনের মূল ভাবনাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মায়ের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার জন্য যে কোনো জিনিস বা কার্যকলাপ যা তাকে বিশ্রাম, আনন্দ এবং মানসিক স্বস্তি দিতে পারে, তা এই সময়ে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। পরিবার এবং প্রিয়জনদের উচিত নতুন মায়েদের এই ধরনের ‘স্ব-যত্নের’ সুযোগ করে দেওয়া।