খেলনা কেনা হোক দীর্ঘস্থায়ী: যে ৫টি জিনিস আপনাকে দেখতেই হবে

ছোটবেলায় আমার প্রিয় খেলনা ছিল একটি কাঠের ট্রেন। সেটি আমি বাবার কাছ থেকে জন্মদিনে উপহার পেয়েছিলাম। ট্রেনটির রং ছিল হালকা সবুজ, আর চাকাগুলো ছিল লাল। আমি সেটিকে নিয়ে সারা বাড়ি ঘুরতাম, কখনো ড্রইংরুমের কার্পেটের ওপর দিয়ে, কখনো বাবার অফিসের টেবিলের চারপাশে। বছরের পর বছর কেটে গেলেও ট্রেনটি ভাঙেনি, রংও ওঠেনি। আমার ছোট বোন, তারপর তারও ছোট ভাই, সবাই সেই ট্রেনটি নিয়ে খেলেছে। আজও আমাদের পুরানো জিনিসপত্রের বাক্সে ট্রেনটি সযত্নে রাখা আছে।

কিন্তু আজকের দিনে এমন দীর্ঘস্থায়ী খেলনা খুঁজে পাওয়া যেন এক চ্যালেঞ্জ। বাজার ভরে গেছে প্লাস্টিকের খেলনায়, যেগুলো একবার ভেঙে গেলে বা নষ্ট হলে সোজা ডাস্টবিনে জায়গা পায়। বারবার খেলনা কেনা যেমন ব্যয়বহুল, তেমনি পরিবেশের জন্যও ক্ষতিকর। তাহলে কীভাবে আমরা এমন খেলনা বেছে নেব যা কেবল টেকসইই নয়, বরং সময়ের সাথে সাথে তার কার্যকারিতা বজায় রাখবে? এখানে ৫টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দেওয়া হলো যা আপনাকে দীর্ঘস্থায়ী খেলনা বেছে নিতে সাহায্য করবে।

 

১. উপকরণ: প্লাস্টিক নয়, কাঠ বা মেটাল বেছে নিন

 

খেলনার স্থায়িত্বের প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্ণায়ক হলো তার উপকরণ (Material)। প্লাস্টিক দেখতে আকর্ষণীয় হলেও তা সহজেই ভেঙে যায়, বিশেষ করে শিশুদের হাতে পড়লে। অন্যদিকে, কাঠ বা মেটাল দিয়ে তৈরি খেলনাগুলো সাধারণত অনেক বেশি মজবুত এবং টেকসই হয়। একটি ভালো মানের কাঠের ব্লক সেট বা মেটালের খেলনা গাড়ি বছরের পর বছর টিকে থাকতে পারে। এগুলো কেবল টেকসইই নয়, বরং পরিবেশের জন্যও ভালো।

 

২. গঠন: মজবুত কাঠামো এবং কম অংশ

 

একটি খেলনা যত বেশি মজবুত এবং সহজ গঠনযুক্ত হবে, তার ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা তত কম। যে খেলনাগুলো ছোট ছোট অসংখ্য অংশ দিয়ে তৈরি বা যার গঠন খুব জটিল, সেগুলো সহজেই ভেঙে যায়। এমন খেলনা কিনুন যার গঠন সহজ এবং এর অংশগুলো ভালোভাবে জোড়া লাগানো। খেলনার কোন অংশটি সহজে ভেঙে যেতে পারে বা আলাদা হয়ে আসতে পারে, তা কেনার আগে পরীক্ষা করে নিন। একটি সাধারণ কাঠের ঘোড়া বা একটি ব্লক সেট, যা সহজে ভাঙে না, তা একটি জটিল ইলেকট্রনিক খেলনার চেয়ে অনেক বেশি টেকসই হবে।

 

৩. উদ্দেশ্য: বহুমুখী ব্যবহার এবং সৃজনশীলতা

 

একটি খেলনা কেবল টেকসই হলেই হবে না, সেটির ব্যবহারও দীর্ঘস্থায়ী হতে হবে। যে খেলনাগুলো বহুমুখী (Versatile) এবং সৃজনশীল খেলা (Creative Play)-কে উৎসাহিত করে, সেগুলো শিশুরা দীর্ঘ সময় ধরে খেলতে পারে। যেমন, একটি সাধারণ ব্লক সেট দিয়ে শিশুরা প্রতিদিনই নতুন কিছু তৈরি করতে পারে। এটি তাদের কল্পনাশক্তিকে নতুনভাবে ব্যবহার করার সুযোগ দেয়, তাই তারা সহজে একঘেয়েমি অনুভব করে না। অন্যদিকে, একটি ইলেকট্রনিক খেলনা, যা কেবল একটি নির্দিষ্ট কাজই করতে পারে, তা শিশুরা দ্রুত আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।

 

৪. নির্মাতার খ্যাতি: নির্ভরযোগ্য ব্র্যান্ড বেছে নিন

 

যে কোম্পানিগুলো মানসম্মত এবং নিরাপদ খেলনা তৈরির জন্য পরিচিত, তাদের খেলনা সাধারণত বেশি টেকসই হয়। খেলনা কেনার আগে নির্মাতার খ্যাতি এবং তাদের পণ্যের গুণগত মান সম্পর্কে একটু খোঁজখবর নিন। নির্ভরযোগ্য ব্র্যান্ডগুলো প্রায়শই ভালো মানের উপকরণ ব্যবহার করে এবং তাদের খেলনার নকশা এমনভাবে করে যা দীর্ঘস্থায়ী হয়। তাদের খেলনার প্যাকেজিং-এ সাধারণত নিরাপত্তা সনদ (যেমন CE, ASTM) এবং উপকরণ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া থাকে।

 

৫. রক্ষণাবেক্ষণ: পরিষ্কার করা সহজ কিনা

 

যে খেলনাগুলো সহজে পরিষ্কার করা যায়, সেগুলোর স্থায়িত্বও বেশি হয়। কারণ নিয়মিত পরিষ্কার করা হলে তা জীবাণু ও ময়লা থেকে সুরক্ষিত থাকে এবং নতুন থাকে। খেলনা কেনার আগে দেখুন এটি কীভাবে পরিষ্কার করতে হয় এবং সেই পদ্ধতি আপনার জন্য কতটা সহজ। যেমন, কিছু খেলনা কেবল একটি ভেজা কাপড় দিয়ে মুছেই পরিষ্কার করা যায়, আবার কিছু খেলনার জন্য বিশেষ পরিষ্কারক লাগে।

একটি দীর্ঘস্থায়ী খেলনা শুধু আপনার অর্থই সাশ্রয় করবে না, বরং আপনার সন্তানের জন্য একটি প্রিয় সঙ্গীও হতে পারে, যা সে তার শৈশবের অমূল্য স্মৃতি হিসেবে সযত্নে রাখতে পারবে। যেমন আমার সেই কাঠের ট্রেনটি।

Write a Review

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Item 0.00৳ 
Loadding...