প্রত্যেক বাবা-মা-ই চান তাদের সন্তান যেন সঠিক সময়ে বিকাশের প্রতিটি স্তর অতিক্রম করে। হাঁটা, কথা বলা, ধরা, ছুঁড়া – এই সবই বিকাশের গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। খেলনা শুধু শিশুদের বিনোদনের মাধ্যম নয়, এটি তাদের শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সঠিক খেলনা নির্বাচনের মাধ্যমে আপনি আপনার সন্তানের এই মাইলফলকগুলো অর্জনকে আরও আনন্দদায়ক এবং কার্যকর করতে পারেন।
বিভিন্ন বয়সে খেলনার ভূমিকা:
- ০-৬ মাস: এই বয়সে শিশুরা মূলত তাদের পঞ্চইন্দ্রিয় ব্যবহার করে জগৎটাকে চেনার চেষ্টা করে। তাদের জন্য হালকা ওজনের, সহজে ধরা যায় এমন খেলনা, যেমন – ঝুনঝুনি, নরম কাপড়ের খেলনা, উজ্জ্বল রঙের বস্তু, এবং বিভিন্ন টেক্সচারের খেলনা উপযুক্ত। এই খেলনাগুলি তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে, শব্দ চিনতে সাহায্য করে এবং স্পর্শের মাধ্যমে অনুভূতি জাগায়।
- ৬-১২ মাস: এই সময় শিশুরা হামাগুড়ি দিতে ও বসতে শেখে। তারা জিনিসপত্র এক হাত থেকে অন্য হাতে নিতে এবং মুখ দিয়ে পরীক্ষা করতে ভালোবাসে। তাদের জন্য কাঠের ব্লক, বিভিন্ন আকারের কাপ, বাটি, এবং ধাক্কা দেওয়ার বা টানার খেলনা ভালো। এগুলি তাদের মোটর দক্ষতা এবং কারণ-অনুসন্ধানের ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
- ১-২ বছর: এই বয়সে শিশুরা হাঁটতে ও ছোট ছোট কথা বলতে শুরু করে। তাদের জন্য ছবিযুক্ত বই, পুতুল, গাড়ি, এবং সাধারণ ধাঁধার খেলনা খুব উপযোগী। এই খেলনাগুলি তাদের ভাষা বিকাশ, কল্পনাশক্তি এবং সমস্যা সমাধানের প্রাথমিক দক্ষতা বিকাশে সাহায্য করে।
- ২-৩ বছর: এই সময় শিশুরা আরও বেশি সক্রিয় এবং তাদের সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পায়। তারা ভূমিকা-পালনের খেলা (যেমন – ডাক্তার-রোগী, শিক্ষক-শিক্ষার্থী) খেলতে পছন্দ করে। তাদের জন্য লেগো বা বিল্ডিং ব্লকস, খেলার সরঞ্জাম (যেমন – খেলনা রান্নাঘর, সরঞ্জাম বাক্স), এবং ছবি আঁকার সরঞ্জাম (যেমন – ক্রেয়ন, রং) খুব উপকারী। এই খেলনাগুলি তাদের সামাজিক দক্ষতা, কল্পনাশক্তি এবং ছোট হাতের পেশী নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
- ৩-৫ বছর: এই বয়সে শিশুরা জটিল ধাঁধা সমাধান করতে, গল্প তৈরি করতে এবং দলবদ্ধভাবে খেলতে পছন্দ করে। তাদের জন্য জটিল লেগো সেট, বোর্ড গেম (সহজ), এবং খেলার পোশাক (যেমন – সুপারহিরো কস্টিউম) উপযুক্ত। এই খেলনাগুলি তাদের সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা, সামাজিক মিথস্ক্রিয়া এবং আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করে।
খেলনা নির্বাচনের ক্ষেত্রে অভিভাবকদের যে সকল বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি :
- বয়সোপযোগী খেলনা: শিশুর বয়স এবং বিকাশের স্তরের সাথে সঙ্গতি রেখে খেলনা নির্বাচন করুন।
- নিরাপদ খেলনা: খেলনাটি যেন ছোট ছোট অংশবিহীন হয় যা শিশু গিলে ফেলতে পারে। খেলনার উপাদান যেন বিষাক্ত না হয়।
- উদ্দীপক খেলনা: এমন খেলনা বেছে নিন যা শিশুর কৌতুহল জাগায়, তাদের চিন্তাভাবনা এবং সৃজনশীলতাকে উৎসাহিত করে।
- টেকসই খেলনা: ভালো মানের টেকসই খেলনা কিনুন যা দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং সহজে ভেঙে না যায়।
খেলনার মাধ্যমে শেখা আনন্দদায়ক এবং কার্যকর। আপনার সন্তানের বিকাশের প্রতিটি ধাপে সঠিক খেলনা নির্বাচন করে আপনি তাদের একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করতে পারেন।